এই অধ্যায়ে আমরা একধরনের রত্ন খোঁজার (Treasure Hunt) কাজ করব। রত্ন খোঁজার বিষয়টি তো আমরা সবাই জানি, তাই না? রাশি রাশি হীরা, মণি, মানিকা, সোনা, রূপা- এসব রত্ন কোথাও লুকিয়ে রাখা থাকে। তারপর সূত্র (Clue) ধরে ধরে সেসব খুঁজে বের করা হয়। শিশু-কিশোরদের এডভেঞ্চার গল্পে বা জলদস্যুদের কাহিনিতে এমন কত রত্ন খোঁজার কথা আমরা পড়েছি। এই অধ্যায়েও আমরা রত্ন খুঁজব, কিন্তু সেই রত্ন হীরা, মণি, মানিকা নয়; অন্য কিছু, আরো বড় কিছু নেই রত্নগুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের সাথী হয়, সুখে-দুঃখে পাশে থাকে। এই রত্নগুলো হলো আমাদের একে অন্যের সাথে সুন্দর সম্পর্ক।
মানুষ সামাজিক প্রাণী। অন্য মানুষের সাথে আমরা মিলেমিশে থাকি। একে অন্যের সাথে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আমাদের সামাজিক জগৎ। এই সম্পর্কগুলো বইয়ের ভাষায় আমরা বলি আন্তঃসম্পর্ক। এই অধ্যায়ে আমরা আমাদের এই সম্পর্কগুলো চিহ্নিত করব। আন্তঃসম্পর্কগুলোর সুবিধা ও গুরুত্বগুলো ভেবে বের করব। কখনো কখনো আন্তঃসম্পর্কে চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি তৈরি হয়। সেই ঝুঁকিগুলো আমরা চিহ্নিত করব। বিশ্বস্ত সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যগুলো কী এবং কীভাবে বিশ্বস্ত সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষা করতে হয় সেই উপায়গুলো খুঁজে বের করব। আমাদের চারপাশে বা কমিউনিটিতে সেবাকাঠামোগুলো কী আছে তা খুঁজে বের করব। আমরা পরিকল্পনা করব কীভাবে ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বস্ত সম্পর্ক কাজে লাগাতে হয়, কীভাবে সেবাকাঠামো থেকে সহায়তা নিতে হয়। পরিকল্পনা করে সেগুলো শ্রেণিতে অভিনয় করে দেখাব। এর পাশাপাশি নিজেদের জীবনে বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে তোলার চর্চা করব। আর এসব কিছুই আমরা করব আমাদের অভিজ্ঞতার ব্যবহার করে। এভাবেই আমরা আমাদের আন্তঃসম্পর্ক বা রত্নগুলো চিনে সেগুলো আরও সুন্দর করার পথে এগিয়ে যাব।
আর দেরি নয়। চলো শুরু করা যাক।
আমার আন্তঃসম্পর্ক
শ্রেণিকক্ষে আমরা আমাদের আন্তঃসম্পর্কগুলোর ছবি এঁকে বা ছকে দেখাব। এই সম্পর্কগুলো হতে পারে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বাস্তব, শিক্ষক ও বিদ্যালয়ভিত্তিক বা অন্য যেকোনো সম্পর্ক।
আন্তঃসম্পর্কগুলোর সুবিধা ও গুরুত্ব (কেন এগুলো আমাদের রত্নের মতো)
আমার সবচেয়ে নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক
আমার কয়েকজন বিশ্বস্ত মানুষের ছবি
ছবি তো আঁকা হলো। এবার আমরা একটু ভাবি, কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্যের জন্য এঁদের সাথে আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সম্পর্ক। তাদের কোন আচরণের জন্য তাদের বিশ্বস্ত মনে করছি। কীভাবে আমরা এই সম্পর্ক আরও বিশ্বস্ত ও সুন্দর করে তুলতে পারি। শ্রেণিতেও আমাদের সাথে নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেসবের আলোকে নিজে ভেবে অপর পৃষ্ঠার ছকটি পূরণ করি।
আন্তঃসম্পর্কের ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ
ঘটনা - ১ অনন্যা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন সে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে তার এলাকার একটি ছেলে তাকে উত্ত্যক্ত করে, অশোভন মন্তব্য করে। তার খুব ভয় কাজ করে, হাত-পা কাঁপে, সে একা চলাফেরা করতে পারে না, মনে হয় কেউ তাকে অনুসরণ করছে। সে খুব অনিরাপদবোধ করে এবং আতঙ্ক লাগে যে ছেলেটা যদি তার কোনো ক্ষতি করে। সে বুঝতে পারছে না যে এই পরিস্থিতিতে সে কী করবে বা কীভাবে তার বাবা-মাকে বিষয়গুলো জানাবে। সে এতটাই মানসিক চাপ বোধ করছে যে সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। |
এখানে সমস্যা বা ঝুঁকিটি কী?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
কেন এই সমস্যা বা ঝুঁকিটি হচ্ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
সমস্যা বা ঝুঁকিটির ফলে কী কী শারীরিক বা মানসিক প্রভাব পড়ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
ঘটনা ২ শোভন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সে তার সহপাঠীদের তুলনায় দেখতে মোটা ও লম্বা। তার সহপাঠীরা সব সময় তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, তাকে বিদ্রূপ করে। তাকে বিভিন্ন প্রাণির সাথে তুলনা করে ও ব্যঙ্গাত্মক নামে ডাকে। এমনকি তারা তাকে খেলায় নেয় না, তাদের সাথে মিশতে গেলে তারা তাকে গুরুত্ব দেয় না, এড়িয়ে চলে। শোভনের এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব মন খারাপ থাকে। তার নিজেকে খুব ছোট মনে হয়, খুব একা আর অসহায় লাগে। ধীরে ধীরে তার আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে, সে সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ও হতাশ হয়ে পড়ছে। সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। আজকাল তার কারও সাথে মিশতেও খুব ভয় হয়। |
এখানে সমস্যা বা ঝুঁকিটি কী?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
কেন এই সমস্যা বা ঝুঁকিটি হচ্ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
সমস্যা বা ঝুঁকিটির ফলে কী কী শারীরিক বা মানসিক প্রভাব পড়ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
ঘটনা ৩ রাফির বয়স ১২। ওরা দুই ভাই বোন রাফি আর মনিকা। মনিকা বড়। মনিকা কিছুদিন আগে বিদেশে চলে যায়। ওখানে পড়াশোনা করছে। রাফি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বোনের সাথে রয়েছে বয়সের ব্যবধান। বোন বিদেশে চলে যাওয়াতে কেমন চুপচাপ হয়ে যায়। বোন বিদেশ থেকে মোবাইল পাঠায়। লকডাউনে স্কুল বন্ধ হবার পর আরো একা হয়ে যায় রাফি। মা ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকে বেশি। এই সব ভালো লাগে না রাফির। ইদানিং অনলাইনে কিছু বন্ধুর কাছ থেকে গেম খেলা শিখেছে। সারাদিন সারারাত মোবাইলে গেম খেলে। খাওয়া, ঘুম, সামাজিকতা কিছুই নেই। মোবাইলে যদি চার্জ না থাকে তাতে সে উদ্বিগ্ন হয়। রুম থেকে বের হয় না। একটা রুমেই বন্দি করে ফেলেছে সে নিজেকে। অসম্ভব মেজাজ হয়েছে তার। সব কিছু কেড়ে নিয়েছে এই মোবাইল যন্ত্রটি। রাফির বাবা-মায়ের মতে সব কিছুর। মূলে এই মোবাইল এবং তার প্রতি আসক্তি। |
এখানে সমস্যা বা ঝুঁকিটি কী?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
কেন এই সমস্যা বা ঝুঁকিটি হচ্ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
সমস্যা বা ঝুঁকিটির ফলে কী কী শারীরিক বা মানসিক প্রভাব পড়ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
ঘটনা ৪ সেলিনার বয়স ১১। সামনে এর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। বাবা-মায়ের স্বপ্ন মেয়ে অনেক বড় হবে। তাই কড়া শাসনে রাখে। পড়ার জন্য অনেক চাপ দেয় ওকে। সবার চেয়ে ভালো করতে হবে ওর। স্কুল আর কোচিং এই নিয়েই ওর জীবন। খেলাধুলার সুযোগ নেই। স্কুলের পরীক্ষায় সবার চেয়ে ভালো করতে না পারলে বাবা-মা শাসন করেন। অথচ ওর বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে ভালো লাগে না। সেলিনার এখন পড়ার কথা ভাবলেই বিরক্ত লাগে। পরীক্ষার কথা ভাবলেই টেনশন হয়। ঘাম হয়। হতাশ লাগে, ঘুম আসে না। ওর ইচ্ছে করে সব ছেড়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। |
এখানে সমস্যা বা ঝুঁকিটি কী?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
কেন এই সমস্যা বা ঝুঁকিটি হচ্ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
সমস্যা বা ঝুঁকিটির ফলে কী কী শারীরিক বা মানসিক প্রভাব পড়ছে?
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………
আমি কী কী ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারি | ঝুঁকিগুলো আমি কীভাবে বুঝব | ঝুঁকিগুলো আসার আগেই সতর্ক হওয়া বা এলে মোকাবিলা করা কেন জরুরি |
---|---|---|
১.
| ||
২.
| ||
৩.
|
ঝুঁকি মোকাবিলায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
আমার এলাকার সেবা প্রতিষ্ঠানের নাম | ঠিকানা | ফোন | ই-মেইল (যদি থাকে) |
---|---|---|---|
বিষয় সম্পর্ক ও সেবা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আমার ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ নিরসনের
ভূমিকাভিনয়ে খুঁজে পাই সমাধান
ঘটনা ১-এর আলোকে করা নাটিকা/ভূমিকাভিনয়ের ওপর প্রতিফলন:
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
ঘটনা ২-এর আলোকে করা নাটিকা/ভূমিকাভিনয়ের ওপর প্রতিফলন:
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
ঘটনা ৩-এর আলোকে করা নাটিকা/ভূমিকাভিনয়ের ওপর প্রতিফলন:
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
ঘটনা ৪-এর আলোকে করা নাটিকা/ভূমিকাভিনয়ের ওপর প্রতিফলন:
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………………….
বিশ্বস্ত সম্পর্ক আরও সুন্দর করায় আমার ব্যক্তিগত চর্চা
গত ১২টি সেশনে আমরা গুপ্তধন খোঁজা, আসল রত্ন জানা, সেই রত্নগুলোকে ব্যবহারের উপায় বের করেছি। সবচেয়ে নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সম্পর্কগুলোই হলো আমার আসল রত্ন। সামনের দিনগুলোতে এই বিশ্বস্ত সম্পর্ককে আরও ভালো করার চর্চা করব। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বিশ্বস্ত সম্পর্কের ছবি এঁকেছি। এবার সেখান থেকে ১-২টি বিশ্বস্ত সম্পর্ককে বেছে নিই। সম্পর্কগুলো আরও ভালো করার ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি তা চিহ্নিত করেছি। প্রয়োজন হলে শিক্ষক ফিডব্যাক দিয়ে। পরিকল্পনাটিকে আরও ভালো করায় সাহায্য করবেন। সামনের এক মাস বিশ্বস্ত সম্পর্ক উন্নয়নের চর্চাসংক্রান্ত ঘটনাগুলোর বিবরণ ডায়েরি বা জার্নালে লিখে রাখব। এই সময়ে কোনো ঝুঁকির মুখোমুখি হলে বিশ্বস্ত সম্পর্কের সাথে কীভাবে শেয়ার করেছি, মতামত নিয়েছি সেগুলোও ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করব। এ ব্যাপারে শিক্ষক দরকার হলে আরও নির্দেশনা দেবেন। নিচের ছকের মতো করে বা আমার যেভাবে পছন্দ সেভাবে ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করে এক মাস পর শিক্ষকের কাছে জমা দেব।
তারিখ | বিষয় সম্পর্ক উন্নয়নের চর (কোনো ঝুঁকি মোকাবিলার বিখত সম্পর্কের সাহায্য: নিয়ে থাকলে সেটির বিবরণ) | এটি আমার পরিকল্পনা অনু কোনো কাজ/ লক্ষ্যটি অর্জনে ভূমিকা রয়েছে |
---|---|---|
| ||
|
সেশনগুলোতে অংশগ্রহন করে সফলভাবে ট্রেজার হান্ট বা রত্ন খুঁজে বের করে আনার জন্য অভিনন্দন ।
আমার অগ্রগতি , আমার অর্জন
নিচের ছকগুলো শিক্ষক পূরণ করবেন। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। উৎসাহ দেবেন। কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। শিখন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলোর মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে স্টার (তারকা চিহ্ন) দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।
খুব ভালো ★★*★ ভালো ★★ আরও ভালো করার সুযোগ আছে-
আরও দেখুন...